মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ
মহান স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বকালে মোহাম্মদপুর এলাকাটি ছিল প্রধানত অবাঙালিদের আবাসিক উপশহর। তৎকালে এখানে উর্দু ভাষীদের প্রাধান্য ছিল। ফলে পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশের প্রধান শহর বা রাজধানীর এই এলাকায় গড়ে ওঠে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের কয়েকটি উর্দু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পক্ষান্তরে, এই অঞ্চলে বাঙালি সন্তানদের পড়াশোনার বিশেষ ব্যবস্থা ছিল না। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী কয়েকজন মহৎ ব্যক্তি বাংলা মাধ্যমের শিক্ষায়তন গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এই উদ্যোগের ফলে স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বেই স্থাপিত হয় মোহাম্মদপুর কলেজ। এছাড়া সমসাময়িক কালে অত্র এলাকায় মোহাম্মদপুর গার্লস কলেজ এবং পার্শ্ববর্তী ধানমণ্ডি এলাকায় ছিল সেন্ট্রাল কলেজ। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমেই চলতে থাকে অত্র এলাকার বাঙালি শিক্ষার্থীদের কলেজ পর্যায়ের শিক্ষাদান কার্যক্রম। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পরে ১৯৭৪ সালে সরকার একটি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করে, কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে কলেজ স্তরের শিক্ষা জাতীয়করণ ও অন্যান্য সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেশের অভ্যন্তরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসংখ্যা ও ভৌগলিক দূরত্বের ভিত্তিতে পুনর্বিন্যাস করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এই সিদ্ধান্তের ফলে মোহাম্মদপুর কলেজ, মোহাম্মদপুর গার্লস কলেজ ও ধানমণ্ডি সেন্ট্রাল কলেজকে একত্রীকরণের মাধ্যমে ১৯৭৫ সালে নাম দেয়া ‘মোহাম্মদপুর সেন্ট্রাল কলেজ’ (Mohammadpur Kendriya College or Mohammadpur central university College) । পরবর্তীকালে এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত ও বাংলা ভাষা ব্যবহারের গুরুত্ব বিবেচনা করে ‘সেন্ট্রাল’ শব্দটির পরিবর্তে এর বাংলা প্রতিশব্দ ‘কেন্দ্রীয়’ গৃহীত হয়। এভাবেই কলেজের নাম হয় ‘মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ’। ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে উল্লিখিত বিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি নানা চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আজকের এই অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। সূচনা থেকে বর্তমান অবধি চার দশকের অধিক কাল পরিক্রমায় শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর যোগ্যতা-দক্ষতা-অভিজ্ঞতা ও ব্যপ্তির উত্তরোত্তর প্রসার ঘটেছে। বর্তমানে এখানে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক(পাস), স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর (প্রথম ও চূড়ান্ত পর্ব) পর্যায়ের শিক্ষাদান কার্যক্রম চালু আছে। মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক (পাস) পর্যায়ে যথাক্রমে ২১ ও ২১ টি বিষয়ে পাঠদান করা হয়। স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে যথাক্রমে ১১ ও ১২ টি বিভাগ চালু রয়েছে। এছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রফেশনাল কোর্সের আওতায় স্নাতক সম্মান সমমানের বিবিএ ও কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE) কোর্স চালু আছে। প্রতি বছরই বোর্ড ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা জিপিএ ৫, প্রথম বিভাগ/ প্রথম শ্রেণিসহ জাতীয় মেধাতালিকায় ঈর্ষণীয় ফল অর্জন করে আসছে।
জাতীয় পর্যায়ে সু-প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের তত্ত্বাবধানে নাচ, গান, অভিনয়, আবৃত্তিসহ সামগ্রিকভাবে সুষ্ঠু সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীদের সম্পাদনায় নিয়মিত সাহিত্য-সাময়িকী ও দেয়াল পত্রিকা প্রকাশিত হয়।
পি-এইচ.ডি. ডিগ্রিসহ গবেষণা কর্মে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতপ্রাপ্ত প্রাজ্ঞ-দক্ষ-অভিজ্ঞ Faculty Member/Academic Staff এর মাধ্যমে শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
বহুসংখ্যক গ্রন্থসমৃদ্ধ কলেজের কেন্দ্রীয় ও সেমিনার লাইব্রেরি, আধুনিক বিজ্ঞানাগার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পাঠকক্ষ ও কম্পিউটার ল্যাবরেটরি উন্নত ফল অর্জনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যাবতীয় চাহিদা পূরণে সক্ষম। এছাড়া এখানে সুপরিসর খেলার মাঠ, যথাযথ অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া-কক্ষ ও আধুনিক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত ক্রীড়া শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সঠিক শারীরিক বিকাশের সহায়ক পরিবেশ বিদ্যমান। শিক্ষায়তন হিসেবে মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের এই বৈশিষ্ট্যসমূহ রাজধানীর যে-কোনো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের প্রতিষ্ঠানকে করে তুলেছে অনন্য।
যাবেন যেভাবে:
আসাদ গেইট থেকে মোহাম্মদপুর যাবার পথে হাতের ডানে নূরজাহান রোডে নামলেই আপনি এর সাইনবোর্ড পাবেন। এই রোডে সামান্য গেলেই আপনি পেয়ে যাবেন কলেজটি। আপান মোহাম্মদপুর বাস স্টপ এ নামলে বি.আর.টি.সি. বাস কাউন্টার পেরিয়ে আসাদগেইট এর দিকে এক মিনিট হাটলেই আপনি নূরজাহান রোডটি পাবেন । রোডের একদম মাথায় কলেজটির সাইনবোর্ড লাগানো। আশা করি আর বলে দিতে হবে না :) :) :)
No comments