ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ (বেইলী রোড)

ঢাকার বেইলী রোডে ঐতিহ্যবাহী ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের (Viqarunnisa Noon School & College) অবস্থান। ১ম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা এবং ইংরেজী ভার্সনে পড়নো হয় এখানে। এই বেসরকারী প্রতিষ্ঠানটিতে আগে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগও নেয়া হয়েছিল, তবে তা আর এগোয়নি।
History

একটি সুশৃঙ্খল, সুন্দর ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি জাতির আত্মোন্নয়নের অপরিহার্য অঙ্গ। একটি যথার্থ বিদ্যালয়ই পারে জাতির মানুষ তৈরির স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে। বাংলাদেশের যে কয়টি বিদ্যালয় এই মহান দায়িত্বকে মাথা পেতে নিয়েছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ তার মধ্যে একটি।
ভিকারুননিসা নূন স্কুলটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে রমনা থানাধীন ১/এ নিউ বেইলী রোডে অবস্থিত। ঢাকার গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট থেকে এর দূরত্ব আনুমানিক এক কিলোমিটার এবং ঢাকা জিয়া বিমান বন্দর থেকে দূরত্ব আনুমানিক দশ কিলোমিটার। এই স্কুলটির বীজ সর্বপ্রথম প্রোথিত হয়েছিল ১৯৪৭ সালে যা ‘রমনা প্রিপারেটরি স্কুল’ নামে রমনা জিমখানায় স্থাপিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর জনাব ফিরোজ খান নূনের বিদেশী পত্নী বেগম ভিকারুননিসা নূন স্কুলটি পরিদর্শনে এসে এর ব্যবস্থাপনা, শিক্ষাপদ্ধতি, নিয়মশৃঙ্খলা দেখে মুগ্ধ হন এবং বেইলী রোডে ১৯৫২ সালের ১৪ জানুয়ারী ভিকারুননিসা নূন স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত করেন। স্কুলটি পর্যায়ক্রমে ভিকারুননিসা সিনিয়র কেমব্রিজ স্কুল হিসাবে পরিবর্তিত হয়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা উত্তরকালে একটি সম্পূর্ণরুপে বাংলা মাধ্যম স্কুল হিসাবে পরিচিত হয়। ১৯৭৮ সালে স্কুলটি মাধ্যমিক পর্যায় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে উন্নীত করা হয়। ক্রমান্বয়ে ছাত্রীভর্তির চাপে ১৯৮৬ সালে স্কুলের একটি বৈকালিক শাখা খোলা হয় এবং আরো সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে ধানমন্ডি এলাকায় স্কুলের একটি ব্রাঞ্চ বৃদ্ধি করা হয়। সেখানেও প্রভাতী ও বৈকালীন দুটি শাখা চালু হয়ে যায়। ১৯৯৫ সালে মূল ভবনে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে ইংরেজি মাধ্যম শুরু হয় যা পর্যায়ক্রমে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত উন্নীত হয়। ২০০৫ সালে ইংরেজি মাধ্যমে প্রথম শ্রেণী খোলা হয় এবং ২০০৬ সালে তা চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। ২০০০ শিক্ষাবর্ষে ক্রমাগত ছাত্রীভর্তির চাহিদা ও নারী শিক্ষা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে বসুন্ধরায় প্রভাতী ও বৈকালিক শাখায় প্রথম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত দুটি শাখা সম্প্রসারণ করা হয় যা পরবর্তীতে ক্রমপর্যায়ে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত করা হবে। ২০০৪ সালে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সম্প্রসারণ ও অগ্রগতির আরও একটি বার্তা বয়ে এনেছে সরকারি অনুকূলে প্রাপ্ত আজিমপুরে একখন্ড জমি প্রাপ্তি। যেখানে ধানমন্ডি শাখাকে স্থানান্তরের উদ্দেশ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। ধানমন্ডি শাখার অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ধানমন্ডি শাখাকে স্থানান্তরিত না করে আজিমপুরে প্রাপ্ত জমিতে নতুন একটি শাখা আজিমপুর শাখা নামে খোলা হয়। ২০০৬ সালের শিক্ষাবর্ষে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০০৬ সালের ৪ মে আনুষ্ঠানিক ভাবে এর উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন। বর্তমানে মূল শাখার প্রভাতী ও দিবা শাখা, ইংরেজি শাখা ছাড়া বসুন্ধরা, আজিমপুর, ধানমন্ডি এই তিনটি শাখার দিবা ও প্রভাতী শাখা রয়েছে।
স্কুলটির নামের উৎস জন্মসূত্রে অস্ট্রিয়ান মহিলা ভিকারুননিসা নুন। ১৯৪৫ সালে ফিরোজ খান নুনের সাথে বিবাহে আবদ্ধ হওয়ার সূত্রে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তার পূর্ববর্তী নাম ভিক্টেরিয়া পরিবর্তন করে ভিকারুননিসা নাম গ্রহণ করেছিলেন। নুন পরিবার সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্নভাবে তাদের অবদানের অংশ হিসেবে ১৯৫১ সালে শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন।
লেজের ছাত্রীদের জন্য অবশ্য পালনীয় কিছু নিয়মাবলী
(কলেজ কর্তৃপক্ষ ঘোষিত নিয়মাবলী প্রত্যেক ছাত্রীকে অত্যান্ত যত্নের সঙ্গে পালন করতে হয়।)
কলেজ শুরুর নির্ধারিত সময়ের পর কলেজ গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। কোন ছাত্রী এরপর আর কলেজে প্রবেশ করতে পারে না।
কোন ছাত্রী কলেজে প্রবেশের পর কোন কারণেই বাইরে যেতে পারে না। অনিবার্য কোন কারণে যেতে হলে অভিভাবকে আসতে হয়।
কোন ছাত্রী কলেজের সম্পত্তির করলে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।
পাঠ্যের জন্য প্রয়োজনীয় বই, খাতা ছাড়া অন্য কোন বই, সিডি বা পোশাক ব্যাগে আনা নিষিদ্ধ।
কোন ছাত্রী মোবাইল ফোন বা MP3, MP4 Pyayer ইত্যাদি সঙ্গে আনতে পারেনা।। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
কানে একজোড়া সোনার রিং ছাড়া অন্য কোন স্বর্ণালংকার পরা নিষেধ। কোন ছাত্রী নাকফুল পরে আসতে পারেনা।
কোন ছাত্রী চুলে হেয়ার ড্রাই ব্যবহার করতে পারে না। কলেজে ছাত্রীর একটি বেণী করে বা পনি টেইল বেঁধে আসতে হয়। সামনে ছোট চুল থাকলে তা কালো ক্লিপ দিয়ে পরিচ্ছন্নভাবে আটকে আসতে হয়।।
ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ছাত্রী ক্লাস বর্জন করলে তাকে শাস্তি পেতে হয়।।
এই কলেজে বিবাহিত ছাত্রী ভর্তি করা হয় না। সেশন চলাকালীন কোন ছাত্রীর বিবাহ হলে তাকে বদলি সনদ প্রদান করা হয়।

শাখা
ভিকারুননিসা স্কুল এন্ড কলেজের বেইলী রোড শাখার পাশাপাশি একই প্রশাসনের অধীনে ধানমন্ডি, আজিমপুর ও বসুন্ধরা এলাকায় শাখা পরিচালিত হচ্ছে।





পথ নির্দেশ:

শান্তিনগর মোড় থেকে হেঁটে সর্বোচ্চ ৪-৫ মিনিট লাগবে। আপনাকে যেতে ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের দিকে বেইলী রোডে। সিদ্ধেশ্বরী গালর্স কলেজের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত।
 

No comments

Theme images by zxcynosure. Powered by Blogger.