স্বপ্ন
আমরা যারা গ্রামের বা উপজেলা পর্যায়ের কোন স্কুল বা কলেজে পড়ালেখা করেছি বা করি তাদের স্বপ্নগুলি কেন যাব খুব একটা জোরালো হয় না (কিছু ব্যতিক্রম আছে)। কেন হয় না বলেন তো.......
[এটা আমার একান্ত নিজস্ব মত। সবার সাথে মিলবে এমন নয়।]
সময় গুণে গুণে অমি ২২ বছরে আমার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে। অমি গ্রামের ছেলে, বলতে হয় নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের অসহায় একটা ছেলে। পিতার অশেষ ইচ্ছায় এবং তার স্বাভাবিক চলার গতিতে অমি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এত পর্যন্ত সব কিছু চলছিল তার পিতার সহযোগিতায়। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে অমি বন্ধু মারফত জানতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দিতে গেলে কোচিং সেন্টারে ভর্তি হতে হবে। এর আগে পর্যন্ত অমির বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে খুব একটা ধারণা ছিলো না। তাই বলে এমন না যে সে কোন দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম শুনেনি। সে আসলে জানত না যে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হবার জন্য পরীক্ষা দিতে হয় এবং এর জন্য আবার কোচিং করা অতি জরুরী। যাহোক ভর্তি যখন হতেই হবে তখন আর সময় নষ্ট করে লাভ কি। সে তখন তার বাবার কাছে বিষয়টি জানায়।
এতে কি হবে তা তার (বাবার) কোন ধারণা নেই। যাহোক ছেলের কথা শুনে আশে পাশের গ্রামের (যেহেতু তার গ্রামে কোন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কেউ নাই) খোঁজ খবর নেয়। এর পর সে হিসেব করে যে কোচিং খরচ , মাসিক থাকা খাওয়া এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ হিসেব করে দেখে যে তার মোট ৪০,০০০/- টাকা দরকার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পর্যন্ত। কারণ তার এক ভাইপো তখন রাজশাহী শহরে উচ্চ মাধ্যমিক এ ভর্তি হয়েছে এবং তার শহর সম্পর্কে একটা স্বাভাবিক ধারণা আছে। সে যাই হোক। অমির পিতা অনেক চিন্তা েকরে এবং হিসেব নিকেশ করেই এই টাকার কোন উৎস না পেয়ে জমি বন্ধক রাখার সিধান্ত নেয়। শর্ত থাকে যে অমি চাকুরি করে এই জমি বন্ধকী জমিটি উদ্ধার করবে।
যা হোক যেমন কথা তেমন কাজ। লিখিত পরীক্ষা শেষ করেই কয়েক বন্ধুকে সাথে নিয়ে সে তারই এলাকার এক বড় ভাইয়ের কোচিং এ ভর্তি হয়। আবার তার থাকার ব্যবস্থা হয় তারই চাচাতো ভাই এর কাছে।যেহেতু নতুন শহর একসাথে থাকলে ভালো হবে আবার খরচও কিছুটা কম হবে। যেমন কথা তেমন কাজ। অমি তার পরীক্ষা পর্ব শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার জন্য শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
এর মাঝে দুটি ঘটনা অমির জীবনকে সামনে নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে উৎসাহ এবং একমাত্র অবলম্বন হিসেবে দেখা দিল------
এক, অমি’র প্রেমিকা। স্বাভাবিক ভাকে গ্রামের আর পাঁচটা ছেলের মতেই অমি লাজুক স্বভাবের এরং অতি চঞ্চল। কোন কাজ কখনও সে ভেবে করে না। এখনও যে করে তা না। তো সেই প্রেমিকা তার উৎসাহের অন্যতম অবলম্বন। কারণ অস্বাভাবিক হলেও তার প্রেমিকা তার থেকে বয়সে বড় এবং তাকে বিয়ে করতেই হবে। এবং তা অতি দ্রুত। কেননা মেয়েটি গরিব এবং তাকে বেশি দিন ঘরে রাখা সম্ভব না। সুতরাং তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতেই হবে। চান্স পেলে সে অবশ্যই ময়েটিকে বিয়ে করতে পারবে; কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলে সে বাড়িতে বলতে পারবে যে সে মেয়েটিকে বিয়ে পছন্দ করে এবং বিয়ে করতে পারবে। কতটা স্বম্ভব সেটা আপতত অমির চিন্তার মধ্যে নেই।
দ্বিতীয়ত, অমি যখন মাধ্যমিক পাস করে তখন খুব ভাল না হলেও ভালই রেজাল্ট করে। তারই ক্লাসের পাশের স্কুলের সেরা ছাত্রী এবং একই গ্রামের বান্থবী সমতুল্য তার (অমির) সমানই রেজাল্ট করে। বলতে গেলে অমির একমাত্র প্রতিযোগি। কেন তা অমি জানে না। গ্রামের দুইজন একই সাথে একই ক্লাসে পড়ালেখা করলে এমনটা ঘটেই। যেহেতু সে হারেনি তাই তাকে তো ভাল কলেজে ভর্তি হতেই হবে। যেহেতু সায়েন্স গ্রুপ থেকে সে ভাল কলেজে চান্স পাবে না আবার সায়েন্স পড়ানোর মতো অমির বাবার সামর্থ্যও নেই তাই তাকে কমার্স নিতে হবে। সত্যি সত্যি অমি রাজশাহীর সেরা কলেজ নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজে চান্সও পেয়ে যায়। সে তো মহাখুশি। সত্যি বলতেব কি এই বয়সে এর চেয়ে খুশির কোন কারণ অমির জীবনে নেই। থাকার কথাও না। নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের একটা ছেলের এর চেয়ে বেশি কিছু কামনাও করতে পারে না। এই দিকে অমির পিতার মাথায় হাত। অভাবের সংসারে প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা জোগানো অনেক কষ্ঠের ব্যাপার এবং রীতিমত অসাধ্য বলা চলে। যাহোক অমি এবং অমির বাবার অদম্য মনোবলে অমি সিধান্ত নেয় যে সে ভর্তি হবেই ভালো কলেজে। কারণ ভালো কলেজে ভর্তি হলে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। সত্যই উজ্জল নাকি অন্ধকার তার অমির ছোট মাথায় থাকার কথাও না। ভর্তি হতে যাবে তারই অত্যন্ত কাছের এবং একমাত্র (এখনো একমাত্র) বন্ধু ও বন্ধুর বাবার সাথে। যথারীতি কলেজে গেল ভর্তি হতে কিন্তু কলেজে গেটে প্রবেশ করতে পারলো না। কারণ আজ শুধু বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবে। মানবিক বিভাগ এবং কমার্স পরের দিন মানে শনিবারে। এখন অমি তো সিধান্তহীনতায় পড়ে গেল। সে বাড়ি ফিরে যাবে নাকি এখানেই থাকবে। অমির বন্ধু ভর্তি হয়ে গেল এবং অমির মন খারাপ হয়ে গেল। অমি তো বোকা একটা ছেলে। কেন সে না জেনেই আসল। যাহোক এবার অমি’র বন্ধু ভর্তি হলেই তার বাবা হন্য হয়ে মেস খুঁজতে লাগল। কোন ভাবেই মেস পাওয়া যাচ্ছে না। দুটো তো দূরের কথা একটা মেসই পাওয়া যায় না। তখন অমির বন্ধুর বাবা শুধু নিজের ছেলের জন্যই মেস খুঁজতে লাগল। এতে অমির খুব কষ্ট লাগল। যাহোক অমি আর কাউকে কিছু না বলে বাড়ি ফিরে গেল। সিধান্ত হয় যে শনিবার সকালে এসে সে ভর্তি হবে। কারণ সেখানে থাকার কোন সুযোগ নেই, কেননা তার পরিচিত কেই এই শহরে থাকে না...........
No comments